আপনি যে নাইট ক্রিম টি ব্যবহার করেন সেটি কি আসলেই উপকারী? নাকি আরো ভালো কিছু পাওয়া যাচ্ছে বাজারে? জেনে নিন আপনার জন্য কোন নাইট ক্রিম সবচেয়ে ভালো । আর সেই নাইট ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম ।
প্রত্যেকটি মেয়েই তার সৌন্ধর্যের ব্যপারে সচেতন। তারা সবসময় নিজেকে সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আর সুন্দর করে সাজতে প্রয়োজন হয় বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী। যেমন বিভিন্ন ত্বক ফর্সা কারী ক্রিম।
বেশিরভাগ ত্বক ফর্সা কারী ক্রিম ব্যবহারে ত্বক সাময়িক ভাবে ফর্সা হলেও ত্বকের অনেক ক্ষতি সাধিত হয়। আর বর্তমানে মেয়েরা ত্ব্ক এর ব্যাপারে অনেক সচেতন। অনেকেই এখন ত্বক ফর্সা রাখার থেকে ত্বক সুস্থ রাখার দিকে বেশি নজর দেয়।
সৌন্ধর্য প্রেমী অনেক মেয়ে আবার নিজেকে করতে চায় সবচেয়ে সুন্দরী। তাই অনুসরন করে নির্দিষ্ট স্কিন কেয়ার রুটিন। এসব স্কিন কেয়ার রুটিন এর অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে নাইট ক্রিম। ভালো মানের একটি নাইট ক্রিম আপনার ত্বক কে করে তুলতে পারে সুস্থ, সাভাবিক এবং উজ্জ্বল।
এখব প্রশ্ন হচ্ছে কোন নাইট ক্রিম সবচেয়ে ভালো ? নাইট ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম কি? চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এসকল ব্যপারে বিস্তারিত।
নাইট ক্রিম কি ?
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে, কতো ক্রিমের নাম শুনলাম নাইট ক্রিম আবার কি?
একজন সৌন্ধর্য প্রেমী মেয়েই জানে নাইট ক্রিম আসলে কি। একজন সৌন্ধর্য প্রেমী মেয়ে তার সৌন্ধর্য চর্চার জন্য ক্রিন কেয়ার রুটিন অনুযায়ী রাতের বেলা ঘুমাতে যাওয়ার আগে যে ক্রিম ব্যবহার করে তাকে নাইট ক্রিম বলে।
একটি নাইট ক্রিমে যা যা থাকেঃ
- ভিটামিন
- কলিজিন
- অ্যামিনো এসিড (যা রাতের বেলা ত্বকের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে)
কোন নাইট ক্রিম সবচেয়ে ভালো ?
যে নাইট ক্রিমটি আপনার ত্বকের জন্য পারফেক্ট সেটিই আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো। এজন্যই একেক জনের ত্বকের জন্য একেক নাইট ক্রিম ভালো।
আমাদের আজকের আরটিক্যাল এ থাকছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ৫ টি নাইট ক্রিম এর তালিকা। এই তালিকার প্রতিটি ক্রিম যথেষ্ট ভালো। এবার আপনাকে শুধু খুজে বের করতে হবে কোন ক্রিমটি আপনার ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো।
প্রতিটি ক্রিম এর ব্যাপারে বিস্তারিত পড়লে আশাকরি সহজেই বুঝে যাবেন কোন ক্রিমটি আপনার জন্য ভালো।
আরো জানুন – ম্যাজিক নাইট ক্রিম বানানোর পদ্ধতি । ১ রাতে ফর্সা হওয়ার উপায়
১. Dermalogica Overnight cleansing Gel – সেরা নাইট ক্রিম
আপনার ত্বকে যদি হয়ে থাকে একনে বা পোর্টস এর সমস্যা, আর আপনি যদি খুজে থাকেন এর সহজ সমাধান তাহলে এই ক্রিমটি আপনার জন্য হতে পারে বেস্ট চয়েজ।
কেননা এই নাইট ক্রিম এ থাকা কার্যকরী উপাদান আপনার ত্বককে রক্ষা করবে ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে। আর বজায় থাকবে আপনার ত্বকের আদ্রতা। ফলে আপনি পাবেন সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বক।
ভালো ফলাফল পেতে ক্রিমটি ব্যবহার করুন প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। ব্যবহারের অল্পদিনের মধ্যেই আপনি পাবেন একটি চমতকার ফলাফল।
২. Lakme Absolute Perfect Radiance Skin Lightening Night cream – সেরা নাইট ক্রিম
লেকমির এই ক্রিমটি যদিও একটি নাইট ক্রিম তবুও এর কার্যকারিতা কেবল একটি নাইট ক্রিম এর মতো নয়। এটি আপনার ত্বককে করবে রিপেয়ার এবং মশ্চোরাইজ ফলে আপনি পাবেন একটি উজ্জ্বল ত্বক।
তবে পূর্ণ উজ্জ্বলতা পেতে আপনাকে এটি ব্যবহার করতে হবে নিয়মিত। কারন এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের রঙ হয়ে উঠে হালকা এবং উজ্জ্বল।
৩. Ponds Gold Rediance Youthful Night Cream
আরো জানুন – রূপচর্চায় মুলতানি মাটি
মানুষের ত্বক বয়সের সাথে পরিবর্তনশীল। ফলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর একটি প্রভাব ত্বকের উপর পড়তে শুরু করে। এতে ত্বকে দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। যেমনঃ মেছতা, রিংকেল, কালো ছোপ ছোপ দাগ ইত্যাদি।
আর এসব সমস্যা সমাধানের জন্য এটি একটি বেস্ট ক্রিম। কারণ এই ক্রিমটি ব্যবহারে আপনি ফিরে পাবেন আপনার ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা। ফলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে সতেজ এবং প্রফুল্ল। তাড়াছা আপনার ত্বক রক্ষা পাবে বয়সের প্রভাব থেকে।
৪. Lakme Youth Infinity Skin Sculpting Night Cream
সাধারণত বয়স যত বৃদ্ধি পায় ত্বকের উজ্জ্বলতা তত হ্রাস পায়। এক পর্যায়ে ত্বক হয়ে ওঠে মৃতপ্রায়। তখন অনেক দামী ক্রিম ব্যবহার করেও তেমব সুফল পাওয়া যায় না।
এমন পরিস্থিতিতে এই ক্রিমটি আপনাকে দিতে পারে চমৎকার ফলাফল। এই ক্রিমটি নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বক ফিরে পাবে হারানো সজীবতা। আপনার স্কিনে আসবে টানটান ভাব। তাছাড়া ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতেও চমৎকার কাজ করে এই নাইট ক্রিম ।
৫. Ponds Age Miracle Wrinkle Corrector Night cream
তালিকার আগের ক্রিমটির মতো এই ক্রিমটিও একই ধরনের কাজ করে থাকে। এটিও মূলত বয়স্ক এবং নিষ্প্রাণ ত্বককে পুনরায় সতেজ করে তুলতে কার্যকারী ভুমিকা পালন করে।
এটি নিয়মিত ব্যবহারে প্রথমত সমাধান হয় ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দ্বিতীয়ত বাড়তে থাকে ত্বকের উজ্জলতা। তালিকার কোন ক্রিমটি আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো লাগলো কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমাদেরকেও।
আরো জানুন – এলোভেরার উপকারিতা
নাইট ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম
বর্তমানে সৌন্ধর্য প্রেমী অনেক মেয়েরাই নাইট ক্রিম ব্যবহার করছে নিয়মিত। এতে তাদের ত্বক হয়ে উঠছে উজ্জ্বল এবং লাবণ্য ময়। তবে এখনো অনেক মেয়েই রয়েছে যারা জানে না নাইট ক্রিম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম। তাই এখন আমি কথা বলছি নাইট ক্রিম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।
- প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে ভালোভাবে আপনার মুখটা ধুয়ে নিন। এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন ভালো মানের একটি কেইস ওয়াশ।
- তবে শীতকালে প্রয়োজন এক্সট্রা সিকিউরিটি। এক্ষেত্রে আপনি ত্বকে করতে পারেন ক্লিনজিং।
- ক্লিনজিং করার পর ত্বকে লাগিয়ে ফেলুন ভালো মানের একটি টোনার।
- তবে আপনি যদি প্রতিদিন মেকআপ করতে অভ্যস্ত থাকেন তাহলে আপনাকে নিতে হবে আলাদা ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে প্রথমে ত্বকে লাগিয়ে নিন বুস্টার সিরাম।
- অবশ্যই ব্যবহার করবেন আন্ডার আই ক্রিম। তাছাড়াও ত্বকে থাকা কালো কালো দাগের উপরেও ব্যবহার করবেন আন্ডার আই ক্রিম।
- অবশেষে আপনার হাতে থাকা নাইট ক্রিম টি মুখে ও গলায় মিশিয়ে নিন আলতোভাবে।
নাইট ক্রিম বানানোর পদ্ধতি
যদিও বাজারে অনেক ভালো ভালো নাইট ক্রিম পাওয়া যাচ্ছে, তবুও অনেকেই এগুলোর উপর আস্থাশীল না। তাদের আস্থা হচ্ছে প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান এর উপর। তারা চায় নিজেদের প্রসাধনী সামগ্রী প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে নিজেরাই তৈরি করতে। মূলত তাদের জন্যই এই আমরা লিখছি সঠিকভাবে নাইট ক্রিম বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে।
এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করলে আপনি খুব সহজেই ঘরোয়াভাবে নাইট ক্রিম বানিয়ে নিতে পারবেন। যা ব্যবহারে আপনার ত্বক উঠবে আকর্ষনীয়।
ঘরে বসে নাইট ক্রিম তৈরি করতে যা লাগবে:
- কাঠবাদাম
- গোলাপজল
- টক দই
- মধু
- জাফরান
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল
- ভিটামিন সি ক্যাপসুল ইত্যাদি
নাইট ক্রিম বানাতে আপনাকে যা যা করতে হবেঃ
- প্রথমে আপনি একটি পাত্রে গোলাপজল নিন। তারপর সেখানে পরিমান মতো কাঠবাদাম সারারাত ধরে ভিজিয়ে রাখুন।
- পরদিন সকাল বেলা বাদাম এর সাথে পরিমান মতো জাফরান মিশিয়ে নিন। তারপর একটি ব্লেন্ডারে এগুলো বেন্ড করে নিন। ব্লেন্ডার না থাকলে বেটে নিলেও চলবে।
- ভালো ভাবে ব্লেন্ড করার পর মিশ্রনটির সাথে এড করুন টক দই, মধু, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই ক্যাপসুল। তারপর সম্পূর্ণ মিশ্রণটি ২৪ ঘন্টার জন্য ডীপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন।
- ২৪ ঘন্টা পর তা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে ব্যবহার করুন।
ঘরোয়া ভাবে তৈরি এই নাইট ক্রিমটি নিয়মিত ব্যবহার করুন। দুই সপ্তাহ ব্যবহার করার পর আপনার ত্বকে চমৎকার কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন।
যে কোন জিনিসেরই রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম। একইভাবে নাইট ক্রিম ব্যবহারেও রয়েছে আলাদা কিছু নিয়ম। নিয়ম মেনে নাইট ক্রিম ব্যবহারে যেমন উপকার হয়, না মাননে তেমন অপকারও হয়।
সাধারণত নির্দিষ্ট একটি বয়স পর্যন্ত আমাদের ত্বক থাকে অনেক কোমল। এ সময় ত্বকে কোনো বাড়তি প্রসাধনী ব্যবহার করলে ত্বক সেটা সহ্য করতে পারে না। ফলে দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের জটিলতা। অনেক সময় তা বড় আকারও ধারণ করে।
একারণেই ২০ বছর বয়সের আগে কারোরই নাইট ক্রিম ব্যবহার করা উচিত না। তবে ২৫ বা তার অধিক বয়সী মেয়েরা নাইট ক্রিম ব্যবহার করলে সেটা সবচেয়ে নিরাপদ।
আপনার বয়স যদি হয় ২৫ এর কম আর আপনি যদি ব্যবহার করেন নাইট ক্রিম, তাহলে আপনার ত্বকে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের সমস্যা।
মানুষের তৈরি প্রতিটি জিনিসের রয়েছে ভালো-মন্দ উভয় দিক। একইভাবে নাইটক্রিমেরও রয়েছে কিছু ভালো এবং কিছু মন্দ দিক। তাই আপনার এ ব্যাপারে থাকা উচিত স্পষ্ট ধারনা।
দীর্ঘ সময় ধরে নাইট ক্রিম ব্যবহারে বাড়তে থাকে ত্বকের মেলানিন এর পরিমান, আর কমতে থাকে ত্বকের প্রয়োজনীয় উপাদান। ফলে ধীরে ধীরে ত্বকে দেখা দেয় ক্ষতিকর প্রভাব।
তাছাড়া এই ক্রিম ব্যবহারে ত্বকের চামড়া হয়ে যায় পাতলা। এতে অতিবেগুনী রশ্মি দ্বারা ত্বক হতে থাকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ। ফলে দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। যেমন ত্বক ফাটা থেকে শুরু করে ভয়াবহ ক্যান্সার।
অনেকেই মনে করেন নাইট ক্রিম তৈরি করা হয় কেবল মেয়েদের জন্য। এই ধারণাটা একদম সঠিক নয়। কেননা ত্বকের যত্ন নেওয়া সবার জন্যই জরুরি। তাছাড়া অনেক ছেলেই রয়েছে যারা রূপচর্চার ব্যাপারে আগ্রহী। তাই সবারই উচিত প্রথমে নিজের ত্বকের ধরন বুঝা। তারপর সে অনুযায়ী নাইট ক্রিম নির্বাচন করা।
উপসংহার
প্রিয় ভিজিটর আশাকরি নাইট ক্রিম এর ব্যাপারে পেয়েছেন স্পষ্ট ধারণা। এখন আপনি নিজেই বলতে পারবেন কোন নাইট ক্রিম সবচেয়ে ভালো । সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। তথ্যবহুল এমন আর্টিকেল পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন techtodayz.com