দাতের ব্যথায় করনীয় । দাঁতে ব্যথা দূর করার সহজ ৬টি ঘরোয়া উপায়

by Arif Rabbani Hasan
দাতের ব্যথায় করনীয়

বর্তমানে আমরা প্রায় সব বয়সের মানুষই দাঁত ব্যথায় ভুগে থাকি। আর এ ব্যাথা যে কতোটা যন্ত্রণাদায়ক তা কেবল ব্যাথা হলেই বুঝা যায়। এজন্যই কেও কেও ব্যাথা হলে খেয়ে থাকি ব্যথানাশক ঔষধ। তাতেও পাওয়া যায় না স্থায়ী সমাধান। অথচ আমরা চাইলে ব্যাথা দূর করতে পারি ঘরোয়া উপায়ে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক দাতের ব্যথায় করনীয় কি কি।

দাতের ব্যথায় করনীয় সমূহ

১) রসুন পেস্ট ব্যাবহার করা

রসুন একটি সহজলভ্য উপাদান। এটি আমাদের হাতের নাগালেই পাওয়া যায়।  তবে এটি যেমন সহজলভ্য দাতের ব্যথা কমাতে এর কার্যকারিতাও তেমন চমৎকার।

এটি দাঁতের ব্যথা কমানোর পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। রসুন ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে রসুন পিষে পেস্ট বানাতে হবে। তারপর সে পেস্ট ব্যথাযুক্ত দাঁতে লাগাতে হবে।  

এছাড়াও রসুনের রস করে সেখানে তুলো ভিজিয়ে দাঁতের লাগানো যেতে পারে।

আরো জানুনঃ দাঁদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

আরো জানুনঃ জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

২) লবণ পানির মিশ্রণ দিয়ে গার্গল করা । দাতের ব্যথায় করনীয়

লবণ পানির মিশ্রণ দিয়ে কুলি করা দাঁতের ব্যথা কমানোর সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায় গুলোর একটি।

কারন দাঁতের মধ্যে আটকে থাকা খাবারগুলো কুলি করার সময় সরে যায়। তাছাড়া লবণ কে বলা হয় প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক। এজন্য লবণ দাঁতের ব্যথা কমায় এবং দাতের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

আপনি যদি ভাল ফলাফল পেতে চান তাহলে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে আধা চা-চামচ লবণ মিশিয়ে গারগল করুন। এভাবে খুব দ্রুত ভাল ফলাফল পাবেন ইনশাল্লাহ।

৩) পেয়ারা পাতা ব্যাবহার করা

অত্যন্ত সহজলভ্য একটি ভেষজ হচ্ছে পেয়ারা পাতা।  যাতে রয়েছে প্রদাহরোধী ও এন্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য। এ সকল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে পেয়ারাপাতা দাঁত ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে পেয়ারা পাতা পানিতে মিশিয়ে সিদ্ধ করতে হবে, তারপর  সিদ্ধ করা পানি দিয়ে কুলি বা গার্গল করতে হবে। এ পদ্ধতিটি অনুসরণ করলে দাত ব্যথা কমানোর ভাল ফলাফল পাবেন ইনশাল্লাহ।

৪) লবঙ্গ তেল ব্যাবহার করা ।

রসুনের মতো লবঙ্গ একটি মসলা জাতীয় উপাদান। আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি রসুন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ভালো কাজ করে।

লবঙ্গ তে রয়েছে এন্টিসেপটিক গুন। ফলে লবঙ্গ দাঁতের ইনফেকশন রোধ ও ব্যাথা কমাতে  অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

লবঙ্গ তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথমে  লবঙ্গ পিষে তেল বা রস বের করে নিতে হবে পরে সেই তেলে বা রসে তুলা ভিজিয়ে তা ব্যথাযুক্ত স্থানে লাগালে হবে। এই পদ্ধতিটি কয়েকবার অনুসরণ করল দাঁতের ব্যথা অনেকটাই উপশম হবে।

তাছাড়া আরও একটি পদ্ধতিতে লবঙ্গ ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে এক গ্লাস পানিতে কয়েক ফোঁটা লবঙ্গের রস মেশালে তৈরি হবে চমৎকার একটি মাউথওয়াশ যা দিয়ে গার্গেল করলে দাঁত ব্যথা উপশম হওয়ার পাশাপাশি মুখের জীবাণুও ধ্বংস হবে।

৫) মাথা উঁচু রাখা । দাতের ব্যথায় করনীয়

মাথা নিচু করে রাখলে দাঁতে ব্যথা বৃদ্ধি পায়। আপনি হয়তো বিষয়টি খেয়াল করে থাকবেন যে রাতে ঘুমানোর সময় বা শুয়ে থাকলে দাঁতের ব্যথা বৃদ্ধি পায়।

কেননা আমরা যখন ঘুমাই বা শুয়ে থাকি তখন শরীর সমতল অবস্থায় থাকে আর এই সময় আমাদের মাথার রক্তচাপ  বৃদ্ধি পায়।  তাই  দাঁত ব্যথা বৃদ্ধি রোধ করতে ঘুমানোর সময় আমাদের উচু বালিশে ঘুমানো উচিত।

৬) হাইড্রোজেন পার অক্সাইড দিয়ে গার্গল করা । দাতের ব্যথায় করনীয়

দাঁতের যে কোন জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান হচ্ছে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। দাঁতের ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ব্যবহার করাও অত্যন্ত সহজ।

এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে পানির সাথে কিছুটা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড  মিশিয়ে মিশ্রণ  তৈরি করতে হবে তারপর সে মিশ্রণটি গারগল করতে হবে এক্ষেত্রে আপনি দাঁত ব্যথার পাশাপাশি সংক্রমণ দূর করতে পারবেন।

তবে সতর্ক থাকবেন যেন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড  গিলে না ফেলেন।

আরো জানুনঃ দাঁদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

আরো জানুনঃ জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

দাঁতের ব্যথার দোয়া

দাঁতের ব্যথা হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক ব্যথা গুলোর একটি যা মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত করে। এমন অসহনীয় ব্যথাও  কুরআন-সুন্নাহর আমলে উপশম হয়। তাই জেনে নিন দাত ব্যাথার দোয়া।

যারা প্রত্যেক নামাজের সময় নিয়মিত মেসওয়াক করে তারা আল্লাহর রহমতে যাবতীয় দাঁতের রোগ থেকে মুক্ত থাকে।

পবিত্র কোরআন এর একটি আমলও রয়েছে  দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার। পবিত্র কুরআনুল কারিমের এই  আয়াতটি যারা নিয়মিত পাঠ করবে তাদের দাঁতের ব্যথা থাকবে না ইনশাল্লাহ।

দাঁতের ব্যথার দোয়া

উচ্চারণ : কুল হুয়াল্লাজি আংশাআকুম ওয়া ঝাআলালাকুমুস সাম্‌আ ওয়াল আব্‌ছারা ওয়াল আফয়িদাতা ক্বালিলাম্মা তাশকুরুন।’ (সুরা মুলক : আয়াত ২৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ আয়াতের আমল করার মাধ্যমে দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

দাঁত ব্যথার ব্যথানাশক ঔষধ

তীব্র ব্যথা হলে অবশ্যই ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করতে পারেন তবে আপনাকে আগে একজন ভালো ডেন্টিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

যদিও আমরা সবাই জানি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা উচিত নয়, তবুও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ব্যাথানাশক ঔষধ নিজেরাই কিনে খেয়ে ফেলি।

এই অভ্যাসের কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করায় নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

তাই দাঁত ব্যথা হলে প্রথমে  ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করুন এবং স্থায়ী ভাবে সুস্থতা লাভের জন্য একজন ডেন্টিস্ট এর পরামর্শ নিন।

দাঁত ব্যাথার কারণ ও প্রকারভেদ সমূহ

দাঁত ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা

দাঁত ব্যাথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন  দাঁতে গর্ত, দাঁতের ফিলিং খুলে যাওয়া,   দাঁত ভেঙে যাওয়া,মাড়িতে বা দাঁতের ইনফেকশন  ইত্যাদি।

পুলপাল দাঁতের ব্যথা

আমাদের মাড়িতে থাকে পুলপাল নামক এক ধরনের টিস্যু।  এই টিস্যু যখন বাতাস বা লালার সংস্পর্শে আসে তখনই মূলত পুলপাল দাঁত ব্যথার শুরু হয়। আর এমন হওয়ার কারণ হচ্ছে দাঁত ফেটে যাওয়া বা দাঁতে তে ভাগ হয়ে যাওয়া।

তবে পুলপাত দাঁত ব্যথার তীব্রতা সাধারণত বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। আপনার দাত যদি ঠান্ডা, গরম বা মিষ্টির প্রতি অতি সংবেদনশীল হয় বা এগুলো খাওয়ার সময় ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার পুলপাল দাঁত ব্যাথা হচ্ছে।

ফাঁটা দাঁত ব্যাথা

দাতের কিছু স্তর থাকে যেমন এনামেল, ডেন্টিন বা পাল্প। দাঁতে ফাটল শুরু হলে এই স্তর গুলোই মূলত ফাটল শুরু হয়।

আর ফাটল ধরা দাঁত ব্যথার সবচেয়ে বড় কারন গুলোর একটি। তবে দাঁতের কোন স্তরটি ফাটল ধরেছে তার উপর নির্ভর করে দাঁত ব্যাথার তীব্রতা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। 

আমরা যখন খাবার চিবিয়ে খাই তখন দাতে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। আর দাতে চাপ সৃষ্টি হলে ডেন্টিনাল ট্যুবুল এর ভেতরে থাকা এক ধরনের তরল পদার্থ চলাচল শুরু করে। এই তরল চলাচল শুরু করা মাত্রই দাঁতে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়।

পেরিওডেন্টাল দাঁতের ব্যথা

দাঁত ব্যথার আরো একটি মূল কারন হচ্ছে দাঁতের আশেপাশে আঘাত লাগা।

আমরা জানি এমন কিছু দাঁতের চিকিৎসা যেমন দাঁত পরিষ্কার করা, দাঁতের ইন্টারফিয়ারেন্স, উচু ফিলিং বা গভীর ফিলিং দাঁতের স্পর্শের এলাকার ভিতরে ফাক ইত্যাদি কারণে দাঁতের আশেপাশে আঘাত লাগতে পারে।

আর দাতের আশেপাশে আঘাত লাগার ফলে দাঁত ব্যথা দেখা দেয়।

দাঁতের নিচের স্নায়ু অর্থাৎ মাড়িতে জ্বালাপোড়া করা দাঁত ব্যথার সবচেয়ে কমন কারণ। এই সমস্যাটি বেশিরভাগ সময়ে মাড়িতে জীবাণুর সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।

দাঁত ক্ষয় হয়ে যাওয়া হচ্ছে দাঁতের আরো একটি কমন সমস্যা।  দাঁতের ক্ষয় প্রথম অল্প অল্প হলেও এক সময় তা  ক্ষয় হতে হতে মাড়ির  সাথে লেগে যায়। এ সময় স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি তাপমাত্রা  দাঁত সহ্য করতে পারেনা।

ফলে ঠান্ডা বা গরম পানি পান করার সময় অসহনীয় খারাপ লাগে, কারো কারো ক্ষেত্রে ব্যথাও শুরু হয়।

ব্যাথার প্রকৃতি কারণ ও স্থানের উপর নির্ভর করে দাঁত অনুভূতি ভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন হালকা মাঝারি বা তীব্র ব্যাথ্যা।

হালকা ও মাঝারি ব্যথা সহনশীল হলেও তীব্র ব্যাথার জন্য দিনের কাজ ও রাতের ঘুম পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। 

দাঁতের ব্যথা তীব্র হলে একজন ভালো  ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।  কিন্ত অধিকাংশ মানুষই দাঁত ব্যথা হওয়া মাত্রই ডেন্টিস্টের কাছে যেতে পারে না  বা যায় না।

একজন ডেন্টিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করে এসকল সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।

আশাকরি টেকটোডেইজ এর আজকের আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। সম্পূর্ণ আটটিক্যালটি  মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

তাহলে দাঁতে তীব্র ব্যাথা হলে আমাদের করণীয় কি? আমাদের আজকের আর্টিকেলে কথা হলো দাতের ব্যথায় করনীয় বা দাঁত ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি  যে পদ্ধতি গুলো ফলো করলে খুব সহজেই দাঁত ব্যথা কমাতে পারবেন ইনশাল্লাহ। আশা করি আরটিক্যাল টি আপনার অনেক উপকারে আসবে। মনোযোগ সহকারে আরটিক্যালটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আরও জানুনঃ দাঁদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

আরও জানুনঃ জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

You may also like

Leave a Comment