দারুচিনি তো আমরা সবাই চিনি তাইনা? সাধারন মানুষ এটিকে মসলা হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু দারুচিনি কেবল একটি মশলাই না। বরং এটি একটি উপকারী ভেসজ। মানবদেহের সুস্থ্যতায় দারুচিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আয়ুর্বেদ অনুসারে, দারুচিনি দিয়ে ঔষধ বানানো যায় বহু রোগের। তাই দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে এই পোস্টটি পড়তে থাকুন।
দারুচিনি কি?
সাধারণভাবে বললে দারুচিনি একটি মসলা। দারুচিনির ছাল অন্যান্য গাছের ছালের তুলনায় পাতলা। এটি দেখতে কিছুটা হলুদ এবং এর গন্ধ অনেক সুগন্ধিযুক্ত। এর ফুলের আকার ছোট। এর ফুলের রঙ সবুজ বা সাদা। দারুচিনি পাতা ঘষলে তীব্র গন্ধ পাওয়া যায়। এর ফল ছিড়লে টারপেনটাইনের মতো গন্ধ পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ে দারুচিনির ব্যবহার করা হয়।
দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা । দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম
হজমের সমস্যা, মেয়েদের মাসিকের সমস্যা, ব্যাথা, মাথা ব্যাথা ও চর্মরোগ সহ বহু রোগ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায় দারুচিনি সেবনে। ডায়রিয়া ও যক্ষার মতো বিভিন্ন ভাইরাস জনিত রোগও সেরে উঠে দারুচিনি খাওয়ার মাধ্যমে। তবে অনিয়মিত খেলে তেমন উপকার হয় না, নিয়মিত খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তাহলে দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম আসলে কি? চলুন তাহলে শুরু করা যাকঃ
ক্ষুধা বাড়ানোর জন্য দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম – দীর্ঘদিন ক্ষুধা কম লাগার ফলে শরীর হালকা হতে শুরু করে। তবে দারুচিনির মিশ্রন খেলে ক্ষুধা বাড়বে, খাবারে রুচি ফিরে আসবে। এক্ষেত্রে 500 মিলিগ্রাম দারুচিনি, 500 মিলিগ্রাম শুঁথি পাউডার ও 500 মিলিগ্রাম এলাচ পিশে মিশ্রণ বানিয়ে নিন। খাবার আগে সকাল-সন্ধ্যা দুইবার এই মিশ্রন সেবন করুন।
হেঁচকি সমস্যায় দারুচিনির উপকারিতা – হঠাৎ হঠাৎ হেঁচকি ওঠা খুবই স্বাভাবিক। তবে সবসময় হেঁচকি ওঠা মোটেও স্বাভাবিক নয়। আর এমন হেঁচকির সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকেই। তাদের জন্য দারুচিনি হতে পারে একটি আদর্শ ঔষধ। এক্ষেত্রে প্রতিবার ১০-২০ মিলি দারুচিনির ক্লথ পান করতে পারেন । সাথে সাথেই অন্যরকম স্বস্তি পাবেন ইনশাআল্লাহ।
বমি বন্ধ করতে দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম – বমি বন্ধ করতে দারুচিনি অত্যন্ত কার্যকরী। এক্ষেত্রে দারুচিনি এবং লবঙ্গের একটি মিশ্রন তৈরি করুন। বমি শুরু হলে ১০-২০ মিলি পরিমান মিশ্রন খেয়ে নিন। এতে দ্রুত বমি বন্ধ হবে।
চোখের রোগে দারুচিনির ব্যবহার – দিন দিন মানুষের চোখের সমস্যা বেড়েই চলছে। চোখ টলতে থাকার সমস্যাটি এখন অনেকের। এতে বেশি বেশি চোখের পলক পড়ে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ দারুচিনি তেল চোখের পাতায় লাগান। এতে অতিরিক্ত পলক পড়া বন্ধ হবে এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
দাঁতের ব্যথার জন্য দারুচিনির ব্যবহার – আপনি কি দাঁতের ব্যথায় ভুগছেন? দারুচিনি আপনার দাঁত ব্যথা দূর করতে পারে সহজেই। প্রথমে দারুচিনির তেল সংগ্রহ করুন। তারপর তেলের ভিতর তুলো ভিজিয়ে ব্যাথাযুক্ত দাঁতে মেখে দিন। এতে দাঁত ব্যথা অনেকটা কমে যাবে। তাছাড়া দাঁত পরিষ্কার ও চকচকে করতেও দারুচিনি অনেক কার্যকরী। ৫-৬ টি দারুচিনির পাতা পিষে পেস্ট বানিয়ে নিন। এই পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন, দাঁত পরিষ্কার ও চকচকে হবে।
মাথাব্যথা উপশমে দারুচিনির উপকারিতা – মাথাব্যথা থেকে আরাম পেতে দারুচিনি কাজ করে ম্যাজিকের মতো। দারুচিনির আট-দশটি পাতা পিষে পেস্ট বানিয়ে নিন। ব্যাথার সময় এই পেস্ট মাথায় লাগান। এতে ঠান্ডা বা গরমে মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সহজেই। তবে মাথাব্যথা কমে গেলে, পেস্টটি অবশ্যই ধুয়ে নিন।
একটু ঠাণ্ডা লাগলেই অনেক সময় মাথা ব্যথা করে। এটি মূলত ঠান্ডা জনিত মাথাব্যথা। এক্ষেত্রে আপনি পরিমাণমতো দারুচিনি তেল নিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন। সাথে সাথেই অনেক আরাম পাবেন ইনশাআল্লাহ।
কেউ কেউ ভুগে থাকেন স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যায়। এক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণ দারুচিনি তেল মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যায় উপকার পাবেন।
সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য দারুচিনির ব্যবহার – দারুচিনি পিষে পানিতে মেশান, তারপর তা গরম করে পেস্ট বানিয়ে নিন। এই পেস্ট ঠান্ডার জন্য খুবই কার্যকরী। তাছাড়া আপনি যদি দারুচিনি পিষে রস বানান, আর সেই রস মাথায় লাগান, তাতেও সর্দি কাশি অনেকটাই কমে যাবে।
কাশি রোগে দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম – কাশি অনেক কমন একটি রোগ। তবে সবচেয়ে বেশি কাশি হয় শীতকালে। কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের খেতে হবে দারুচিনির গুড়া ও মধুর তৈরি মিশ্রন। আধা চা চামচ দারুচিনির গুঁড়া ও ২ চামচ মধু মিশিয়ে মিশ্রনটি তৈরি করে নিন। তারপর নিয়ম করে সকাল-সন্ধ্যা দুইবার খান, কয়েকদিনেই কাশি থেকে মুক্তি পাবেন ইনশাআল্লাহ।
নাকের রোগের চিকিৎসায় দারুচিনি এর উপকারিতা –
এক লিটার পানিতে নিচের উপাদান গুলো ফুটাতে থাকুনঃ
- 3½ গ্রাম দারুচিনি
- 2 গ্রাম শুকনো আদা
- 600 মিলিগ্রাম লবঙ্গ
ফুটাতে ফুটাতে যখন পানি কমে ২৫০ মিলি হবে, তখন এটি ছেঁকে নিন। সুন্দর একটি মিশ্রন তৈরি হবে। প্রতিদিন 50 মিলি পরিমাণ মিশ্রন দিনে তিনবার খাবেন। এতে শীগ্রই আপনি নাকের রোগে ভালো একটি ফলাফল পাবেন।
পেট ফাঁপাতে দারুচিনির উপকারিতা – পেট ফাঁপা নিয়ে চিন্তিত আছেন? কেবল পেট ফাঁপা নয়, পেটের যেকোনো রোগে দারুচিনি কাজ করে চমৎকার ভাবে। ৫ গ্রাম পরিমাণ দারুচিনি গুড়া এবং ১ চা চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। প্রতিদিন তিনবার এই মিশ্রণটি খেতে থাকুন। খুব দ্রুত পেট ফাঁপা কমতে থাকবে ইনশাল্লাহ।
কোলেস্টেরল বা ওজন কমানোর জন্য দারুচিনি পাউডারের ব্যবহার – বাড়তি ওজন কমাতে আমরা কতো কিছুই না করে থাকি। কিন্তু একবার ওজন বেড়ে গেলে কি সহজে কমানো যায়? যাইহোক, দারুচিনি সেবন করে আপনিও কমাতে পারেন বাড়তি ওজন। এক কাপ পানিতে নিচের উপাদানগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে নিনঃ
- দুই চামচ মধু
- তিন চামচ দারুচিনির গুঁড়া (ওজন কমানোর জন্য দারুচিনি ও মধু খুবই কার্যকারী)
মিশ্রনটি দিনে তিনবার খাবেন। এটি কোলেস্টেরল বা ওজন কমায়।
ডায়রিয়া বন্ধ করতে দারুচিনির ব্যবহার – নিচের কয়েকটি উপায়ে ডায়রিয়া বন্ধ করা যায়ঃ
- 5 গ্রাম দারুচিনির গুঁড়ার সাথে 1 চা চামচ মধু মিশিয়ে মিশ্রন বানান। প্রতিদিন তিনবার এই মিশ্রণটি সেবন করুন। এটি ডায়রিয়া বন্ধে বেশ কার্যকারী।
- 750 মিলিগ্রাম দারুচিনি পাউডার এবং 750 মিলিগ্রাম ক্যাচু পাউডার ভালোভাবে মেশান। তারপর এটি পানির সাথে পান করুন। প্রতিদিন তিনবার পান করলে দ্রুত ডায়রিয়া বন্ধ হবে।
- এক গ্লাস বেলগিরির শরবতে 2-5 গ্রাম দারুচিনি গুঁড়ো দিয়ে মিশ্রন তৈরি করুন। এটি সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত পান করুন। এতে ডায়রিয়ায় বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
- 10-20 মিলি দারুচিনির ক্বাথ পান করলে পেট সংক্রান্ত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- দারুচিনির মূল এবং বাকল সংগ্রহ করুন। এগুলো দিয়ে একটি ক্বাথ তৈরি করুন। নিয়মিত 10-20 মিলি পরিমান সেবন করুন। এতে পেটের অসুখ, ডায়রিয়া ভালো হয়।
পেটের সমস্যায় দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম – একটি পাত্রে নিচের সবগুলো উপাদান সমান পরিমানে নিনঃ
- দারুচিনি
- এলাচ
- তেজপাতা
সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে একটি ক্বাথ বানিয়ে নিন। পেটের খিঁচুনি কমাতে এই ক্বাথ অত্যন্ত কার্যকরী। 5-10 মিলি দারুচিনির তেল এবং 10 গ্রাম চিনি একসাথে মিশিয়ে খেতে পারেন, পেটের ব্যথা ও বমি বন্ধে এটি বেশ ভালো ফলাফল দেয়।
অন্ত্রের রোগে দারুচিনির উপকারিতা – অন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন? দারুচিনি সেবনে পেতে পারেন সুস্থ অন্ত্র। পেটে (সিনামন বা দারুচিনি তেল) মালিশ করলে অন্ত্রের চাপ কমে যায়, সাথে সাথেই পাওয়া যায় অন্যরকম স্বস্তি।
চর্মরোগের সাথে লড়াইয়ে দারুচিনির উপকারিতা – চর্মরোগ সারাতে মলম এর মত কাজ করে দারুচিনি ও মধু। প্রথমে দারুচিনি ও মধুর মিশ্রণ তৈরী করে নিন। তারপর রোগাক্রান্ত অংশে এই মিশ্রণটি লাগান। এতে চুলকানি, এলার্জি ও ফোড়া সহ যেকোনো চর্মরোগ খুব দ্রুত সেরে উঠবে।
গর্ভাবস্থার পরে দারুচিনির উপকারিতা – মা হওয়ার পর পর সুস্থ্য হতে দরকার নিচের উপাদান গুলোঃ
- ত্রিকটু
- পিপ্রমূল
- দারুচিনি
- এলাচ
- তেজপাতা
- আকরকরা
সবগুলো উপাদান গুড়া করে নিন। এরপর গুড়ার সাথে ১-২ গ্রাম মধু মিশিয়ে চেটে খান। মা হওয়া পর এটি খেলে মহিলারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।
জ্বরে দারুচিনির উপকারিতা – সর্দি-কাশির জ্বর সারাতে নাপার মতো কাজ করে দারুচিনি। এ ক্ষেত্রে নিচের উপাদান গুলো ভালভাবে মিশিয়ে নিনঃ
- ১ চা চামচ মধু
- ৫ গ্রাম দারুচিনি গুঁড়ো
দিনে তিনিবার অর্থাৎ সকাল, বিকাল, রাতে নিয়মিত এটি খান। এতে সর্দি-কাশি সংক্রামিত জ্বর দ্রুত সেরে উঠবে।
বধিরতা সমস্যায় দারুচিনির উপকারিতা – বধিরতা আমাদের জীবনকে করে তুলে দুর্বিষহ। তবে বধিরতার চিকিৎসায়ও দারুচিনি বেশ ফলপ্রসূ। মাত্র ২ ফোটা দারুচিনি তেল নিয়মিত কানে ব্যবহার করুন। এতে বধিরতায় বেশ উপকার পাবেন।
রক্তপাত বন্ধ করুন দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম – শরীর কেটে রক্তপাত হলে এক কাপ পানিতে এক চা-চামচ দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি দিনে দুই থেকে তিনবার খান।
সাইনাসের চিকিৎসায় দারুচিনির ব্যবহার – নাকের সমস্যা বলতে বুঝানো হচ্ছে সাইনাসের সমস্যাকে। অনেকের নাকের ভেতরে সাইনাসে এক ধরনের ক্ষত দেখা দেয়। সাইনাসের এই ক্ষত ভালো করতে দারুচিনি বেশ জনপ্রিয়। সাইনাসের চিকিৎসায় নিচের উপাদানগুলো সংগ্রহ করুনঃ
- দারুচিনি
- কালো দুধ
- বারবেরি
সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। সাইনাসের ক্ষতে এই পেস্টটি লাগান। পেস্ট দিয়ে ক্ষতটি পূরণ করুন। বেশ ভালো একটি ফলাফল পাবেন।
টিবি রোগে দারুচিনির উপকারিতা – আগের যুগে বলা হতো যক্ষা হলে রক্ষা নেই। আর এখন বলা হয় যথা ভালো হয়। মূলত দারুচিনি ব্যাবহার করেই করা সম্ভব যক্ষা রোগের চিকিৎসা। এতে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়। একজন টিভি রোগী নিয়মিত অল্প পরিমানে দারুচিনি তেল পান করবেন। এটি টিভির জীবানূকে ধ্বংস করে।
আর্থ্রাইটিস চিকিৎসায় দারুচিনি এর উপকারিতা – আথ্রাইটিস রোগে আরাম পেতে দারুচিনি তেল ব্যবহার করুন। তবে দারুচিনি তেল ও মধুর পেস্ট ব্যবহার করলে অধিক উপকার পাওয়া যায়। 20-30 গ্রাম মধু ও 10-20 গ্রাম দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। এটি ব্যথার স্থানে আলতো করে ম্যাসাজ করুন। এটি বেশ কাজে আসে। খাবার তালিকায় রাখতে পারেন আর একটি মিশ্রণ। ১ কাপ পানিতে ২ গ্রাম দারুচিনি গুঁড়ো এবং ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে মিশ্রন তৈরি করুন। এটি প্রতিদিন তিনবার সকাল-বিকাল রাতে নিয়মিত সেবন করুন। এটি গাউটে বেশ কার্যকরী।
দারুচিনির অপকারিতা
একজন ব্যক্তির জন্য যা উপকারী অন্য ব্যক্তির জন্য তা ক্ষতিকরও হতে পারে। কেও যদি প্রশ্ন করেন যে দারুচিনি আমার জন্য উপকারী নাকি অপকারী? তবে উত্তরে আমি বলবো, হ্যা এবং না। এর উপকারীতা এবং অপকারীতা নির্ভর করে আপনি এটি কি পরিমানে খাচ্ছেন তার উপর। কারন অধিক পরিমাণে খেলে ঘটতে পারে মারাত্মক ক্ষতি।
- অধিক পরিমানে দারুচিনি সেবনে মাথা ব্যথা দেখা দেয়।
- দারুচিনি গর্ভপাত ঘটাতে পারে। তাই গর্ভবতী মহিলারা দারুচিনির ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক থাকুন।
- জরায়ুতে দারুচিনি রাখলেও গর্ভধারণ হয়।
অতএব, দারুচিনির ক্ষতি এড়াতে, ব্যবহারের আগে সঠিক নিয়ম জেনে ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন, অধিক দারুচিনি সেবনে অধিক উপকার পাওয়া যায় না।
দারুচিনির দরকারী অংশ
দারুচিনির নিচের অংশ গুলো সেবন করা যায়ঃ
- পাতা
- ছাল
- মূল
- তেল
দারুচিনি কত পরিমাণে খাবেন?
- ছালের গুঁড়া – 1 থেকে 3 গ্রাম
- পাতার গুঁড়া – 1 থেকে 3 গ্রাম
- তেল – 2 থেকে 5 ফোঁটা
দারুচিনি কোথায় পাওয়া যায় বা জন্মে?
দারুচিনি চাষ হয় ভারতের দক্ষিণ পশ্চিম এলাকায়। মূলত এটি বেশি দেখা যায় ভারতের উপকূলীয় এবং নিচু এলাক গুলোতে। যেমনঃ কেরালা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ইত্যাদি। সাধারণত 6 থেকে 16 মিটার পর্যন্ত উঁচু হয় দারুচিনি গাছ। গাছের পাতার রঙ হয়ে থাকে উজ্জ্বল সবুজ বা গোলাপি। এটি চাষ হয় জুন থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত।
শীতে দারুচিনি কিভাবে ব্যবহার করবেন?
শীতকালে বেশিরভাগ মানুষের সর্দি-কাশি-ঠান্ডা লেগেই থাকে। তাই এ সময়ে দারুচিনি খাওয়ার কার্যকারীতা সবচেয়ে বেশি। মসলা হিসেবে দারুচিনি ব্যবহৃত হয় এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু আপনি চাইলে শীতকালে এটি ব্যবহার করতে পারেন আয়ুর্বেদ হিসেবে। প্রতিদিন এটি খেতে পারেন ক্বাথ আকারে অথবা চায়ের সাথে। চায়ে দারুচিনি খাওয়ার মজাই আলাদা। এটি যেরকম বৃদ্ধি করবে চায়ের স্বাদ তেমনি আপনাকে রক্ষা করে ঠান্ডা থেকেও। দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা ঠিক কেমন?
দারুচিনি কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?
আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানব দেহের মেটাবলিজম উন্নত করে দারুচিনি। এতে শারীরিক গঠন স্বাভাবিক থাকে। ফলে দেহের বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রিত হয়।
দেহের ওজন বাড়তে শুরু করলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সত্যিই কঠিন। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে আপনাকে থাকতে হবে বাড়তি সচেতন। পাশাপাশি খেতে পারেন দারুচিনি গুড়ার ক্বাথ। নিয়মিত খেলে অবশ্যই ভাল ফলাফল পাবেন। তবে ভালো ফলাফল পেতে কখনোই অধিক পরিমানে দারুচিনি খাবেন না।
বাড়িতে দারুচিনির গুঁড়া কীভাবে তৈরি করবেন?
আপনি চাইলে বাড়িতেই দারুচিনি গুঁড়ো তৈরি করতে পারেন সহজভাবে। এক্ষেত্রে শুধু নিচের কাজগুলো করতে হবেঃ
- প্রথমে দারুচিনির টুকরো রোদ দিয়ে শুকান, শুকিয়ে শুকিয়ে মচমচে করে নিন।
- মচমচে শুকনো টুকরোগুলোকে “খরাল” দিয়ে পিষে মুটামুটি গুড়ো করে নিন। (খরাল হচ্ছে চূর্ণ করার একটি সরঞ্জাম)
- এই মুটামুটি গুঁড়োকে গ্রাইন্ডারে দিয়ে ভালোভাবে পিষে পাওডার করে নিন।
- এবার বাতাস প্রবেশ করতে পারে না এমন একটি পাত্রে এই পাওডারকে সংরক্ষন করুন।
দারুচিনির ক্বাথ পান করলে কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে?
দারুচিনির ক্বাথ পান করলে অবশ্যই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। কেবল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই বাড়ে না বরং অনেক রোগের চিকিৎসাও করা যায়। বিভিন্ন মৌসুমী রোগ যেমনঃ ঠান্ডা, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা করা যায়। তাছাড়া দারুচিনি ক্বাথ হচ্ছে এমন একটি ভেষজ যা ভারত সরকারের আয়ুষ মন্ত্রকের দ্বারা নির্ধারিত। তাই আয়ুর্বেদীক ওষধ হিসেবে এটি মানুষের নানান উপকারে আসে। এখন বুঝতে পারছেন? দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা ঠিক কেমন?
দারুচিনি কি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে উপকারী?
এতদিনে করুণা সম্পর্কে আমরা জেনে গেছি অনেক অজানা সত্য। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি তার করোনা সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা তত কম। এসকল ব্যাপার চিন্তা করেই, ভারত সরকারের আয়ুষ মন্ত্রক সকল মানুষকে (ইমিউনিটি বুস্টার ডিকোকশন) ক্বাথ পান করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আর এই ক্বাথ এর অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে দারুচিনি। এটি যেমন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মানবদেহকে রক্ষা করে, তেমনি শীতকালীন ছোটখাটো ভাইরাস সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিয়মিত সীমিত পরিমানে দারুচিনি সেবন করা।
প্রিয় ভিজিটর দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সংক্রান্ত এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আশা করি দারুচিনির উপকারিতা সম্পর্কে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়ে গেছেন। দারুচিনির অপকারিতা কিকি এটিও আপনি ভালোভাবে জেনে গেছেন। তাছাড়া সঠিক ভাবে দারিচিচনি দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম জেনে গেছেন। এখন থেকে যেকোনো সময় আপনার প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করুন। ধন্যবাদ।