নার্সিং পড়ার যোগ্যতা, কোথায় পড়বেন ও বেতন কত

by Abdullah Al Fahad
নার্সিং পড়ার যোগ্যতা

বাংলাদেশের হাসপাতালে তুলনায় নার্সের সংখ্যা খুবই কম। দেশে প্রতিনিয়ত যোগ্য ও পেশাদার নার্সের সংখ্যা বেড়েই চলছে। সেই সাথে নার্সিং এর প্রতি আগ্রহী প্রার্থীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অবস্থায় নার্সিং পড়ার পরিকল্পনা করার সময় শিক্ষার্থীরা নানা রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে থাকে। সঠিক তথ্যের অভাবে অনেক প্রতিভাময় জীবন ভুল পথের দিকে এগিয়ে যায়। তাই আমরা নিয়ে এসেছি নার্সিং পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সকল প্রশ্নের সময়োপযোগী ও সেরা সমাধান। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক নার্সিং পড়ার যোগ্যতা কত লাগে?

নার্সিং পড়ার যোগ্যতা কত লাগে?

নার্সিং পড়তে হলে আপনাকে অবশ্যই এসএসসি এবং এইচএসসি পাশ করতে হবে। বিজ্ঞান,ব্যবসা ও মানবিক সকল বিভাগ থেকে নার্সিং পড়া যায়। নার্সিং পড়ার জন্য আপনাকে এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে ন্যূনতম জিপিএ 6.00 গ্রেড পয়েন্ট থাকতে হবে। তবে এসএসসি ও এইচএসসি এর কোনো একটিতেও 2.50 এর কম গ্রেড পয়েন্ট পেলে চলবে না।

নার্সিং কোর্স কত প্রকার?

নার্সিং মূলত তিন প্রকার।

  1. ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স,
  2. বিএসসি ইন নার্সিং সায়েন্স এবং
  3. ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি

1. ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স

ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্সে ছেলে ও মেয়ে উভয়েই পড়তে পারবে। এসএসসি ও এইচএসসি মিলে সর্বনিম্ন 6.00 গ্রেড পয়েন্ট থাকতে হবে। এসএসসি বা এইচএসসি কোন একটিতে 2.50 এর নিচে পেলে চলবে না। এখানে বিজ্ঞান, ব্যবসা ও মানবিক বিভাগের সকল শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারবে এবং পড়তে পারবে।

2. বিএসসি ইন নার্সিং সায়েন্স

বিএসসি ইন নার্সিং সায়েন্সে শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীগণ আবেদন করতে ও পড়তে পারবে। এসএসসি ও এইচএসসি দুটোতে যারা বিজ্ঞান বিভাগে পড়েছে এই কোর্সটি শুধুই তাদের জন্য। এখানে ছেলে ও মেয়ে উভয়েই পড়ার সুযোগ পাবে। এই কোর্সের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি মিলে কমপক্ষে জিপিএ 7.00 গ্রেড পয়েন্ট থাকতে হবে।এসএসসি ও এইচএসসি এর কোনো একটিতে 3.00 এর কম পেলে চলবে না। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানে কমপক্ষে 3.00 গ্রেট পয়েন্ট থাকতে হবে।

3. ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি:

ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স এর মতোই যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। বিজ্ঞান, ব্যবসা ও মানবিক যে কোন বিভাগ এর এসএসসি ও এইচএসসি তে কমপক্ষে 6.00 থাকতে হবে কোনোটিতে 2.50 এর কম গ্রহণযোগ্য হবেনা।

বিশেষ দ্রষ্টব্য, শুধুমাত্র মেয়েরা অংশগ্রহণ করতে পারবে এখানে কোন ছেলে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

নার্সিং পেশার মর্যাদা কেমন?

নার্সিং পেশা টি খুবি মর্যাদাপূর্ণ একটি পেশা। এটা দ্বিতীয় শ্রেণির পেশা। এটি একটি সেবামূলক পেশা তাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর গুরুত্ব অনেক। সৃষ্টির সেবা করা প্রত্যেক ধর্মেরই একটি নৈতিক আদর্শ। এই পেশার মাধ্যমে অর্থোপার্জনের পাশাপাশি নেক ও পূণ্যময় কাজে অংশগ্রহণ করা যায়।

নার্সদের কাজের ধরন / কাজ কি?

আমরা সবাই জানি নার্স অর্থ সেবিকা। নার্স আসলে কোন চিকিৎসক নয়। যদিও এরা চিকিৎসক না তবুও এদের উপর অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি নার্স চিকিৎসকের আদেশ ও পরামর্শ অনুযায়ী রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। যেমন, শরীরের তাপমাত্রা ও রক্তচাপ মেপে থাকেন ইত্যাদি।

ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীদের নিয়মমাফিক ও সঠিকভাবে ঔষধ সেবন করানোর কাজ করে থাকেন। অপারেশন থিয়েটারে সকল সরঞ্জাম প্রস্তুত, রোগীকে অপারেশন টেবিলে নিয়ে যাওয়া ও ডাক্তারদের অপারেশন এর কাজে সাহায্য করার মত গুরুত্বপূর্ণ সকল দায়িত্ব নার্সদের উপর আরোপ করা হয়। রোগীর সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে স্বাস্থ্যের উন্নতি ও অবনতি সম্পর্কে ডাক্তারদের জানানোও নার্সদের কাজ।

নার্সদের কর্মক্ষেত্র কোথায় এবং কেমন?

অধিকাংশ নার্সরাই সাধারণত হাসপাতালে কাজ করে থাকেন। নার্সরা মূলত সরকারি ও বেসরকারি এই দুই সেক্টরে কাজ করে থাকে। সরকারি নার্স দের কর্মক্ষেত্র বেসরকারি নার্সদের থেকে একটু বেশি বিস্তৃত হয়ে থাকে। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল,স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সামরিক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চিকিৎসা বিভাগে কাজ পেয়ে থাকেন সরকারি নার্সরা। বিভিন্ন দুর্যোগের সময় জরুরি প্রয়োজনে সরকারি নার্স মোতায়েন করা হয়ে থাকে।

অপরদিকে বেসরকারি নার্সরা সাধারণত বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকেন। সরকারি নার্স দের থেকে বেসরকারি নার্সরা পরিবেশগত সুবিধা বেশি পেয়ে থাকে। কেননা সরকারি হাসপাতাল এর চেয়ে বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর পরিবেশ অনেক সুন্দর, সুশৃংখল ও পরিপাটি হয়ে থাকে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা,দক্ষতা ও কাজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী নার্সরা বিভিন্ন পদ লাভ করে থাকেন।যেমন,

  • এসিস্ট্যান্ট নার্স
  • স্টাফ নার্স
  • (ICU) আইসিইউ (OT) ওটি সিস্টার ইত্যাদি

নার্সিং এর বেতন কত?

নার্সিং কোর্স শেষে যখন আপনি যখন মূল কাজে OT/assistant sister হিসেবে যোগ দেবেন এ ক্ষেত্রে প্রথমদিকে সরকারি নার্স দের জন্য বাংলাদেশ সরকারের বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী সম্ভাব্য মাসিক গড় বেতন ৮,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৬,৫৪০টাকা পর্যন্ত হয়। বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে নার্সদের বেতন ১৪,০০০ থেকে শুরু হয় এবং প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী বেতন কম বেশী হয়ে থাকে

নার্সিং এর দ্বিতীয় সুযোগ আছে কিনা? নার্সিংয়ে বয়স কত লাগে?

নার্সিং এর দ্বিতীয় সুযোগ আছে। এর জন্য কোন মার্ক কাটা যাবে না। মেডিকেলে যেমন দ্বিতীয়বার ৫ মার্ক কাটা যায় নার্সিং এর সেটা করা হয়না। কিন্তু নার্সিংয়ে দুইবারের বেশি সুযোগ থাকেনা। নার্সিং পড়ার সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২২বছর বা তার কম। ২২বছরের বেশি বয়সীরা নার্সিং পড়তে পারবে না।

ছেলেরা নার্সিং পড়তে পারবে কিনা?

ছেলেরাও নার্সিং পড়তে পারবে। বাংলাদেশ নার্সিং ইনস্টিটিউট গুলোতে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের আসন সংখ্যা খুবই কম। প্রতিবছর ১০% হারে ছেলে শিক্ষার্থীরা নার্সিং পড়ার সুযোগ পায়। বাকি ৯০% আসন মেয়েদের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ।

প্রিয় ভিজিটর, নার্সিং পড়ার যোগ্যতা, কোথায় পড়বেন ও বেতন কত ইত্যাদি সম্পর্কে পুরো আরটিক্যালটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আশা করি আপনি সকল বিষয়ে স্পষ্ট একটি ধারনা পেয়েছেন।

You may also like

Leave a Comment