আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা কথা বলবো Facebook Ceo মার্ক জাকারবার্গ এর জীবনী এবং তিনি কিভাবে সফলতা অর্জন করেছেন তা নিয়ে। অর্থাৎ কথা হবে (Biography of Mark Zuckerberg) নিয়ে।
বন্ধুরা আমাদের আশেপাশে প্রচুর জ্ঞানী, গুণী ও অভিজ্ঞ পণ্ডিতেরা বলে এসেছে জীবনে উচ্চপদে ওঠার জন্য আগে বয়সে বড় হতে হবে।কেননা জ্ঞান, শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা সবকিছুই বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে।কথাটা যদিও পুরোটাই সত্য।
কিন্তু মাথায় রাখবেন, একজন ব্যক্তির অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং শিক্ষা পুরোপুরি তার বয়সের উপর নির্ভরশীল এই কথাটাও কিন্তু গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ অনেক গুণী মনীষী আছেন যারা অনেক ছোট বা কম বয়সে চমৎকার এবং অস্বাভাবিক কিছু কাজ ও আবিষ্কার করেছেন। মার্ক জাকারবার্গ হলেন অল্প বয়সে হওয়া জ্ঞানী ব্যক্তিদের তালিকায় অন্যতম।
মার্ক জাকারবার্গ এর কম বয়সে করা আবিষ্কারের জন্যই কিন্তু আজ আমরা দেশ-বিদেশের যেকোন প্রান্তে মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় Social Networking Platform অর্থাৎ Facebook এর CEO এবং FOUNDER কিন্তু এই মার্ক জাকারবার্গ৷এই ফেসবুক বর্তমানে 1 বিলিয়ন এর অধিক লোক মাসে ব্যবহার করে থাকেন।
বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম বিলিয়নেয়ার (Youngest Billionaire) বলা হয় মার্ক জাকারবার্গ কে। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানতে পারব মার্ক জাকারবার্গ এর জীবনী এবং সফলতা সম্পর্কে।
ছোটবেলায় FACEBOOK CEO মার্ক জাকারবার্গ
মার্ক জাকারবার্গ এর উপর লেখা হলো আজকের বাঙালি বায়োগ্রাফি। এ আর্টিকেলের যখন একজন ব্যক্তির জীবনী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তাই তার ছোটবেলার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কথা জানাটা প্রয়োজন।
Mark Elliot Zuckerberg হলো মার্ক এর সম্পূর্ণ নাম। New York এর Dobbs Ferry নামক স্থানে তিনি 1984 সালের 14 may তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। Karen Zuckerberg হলো মার্ক এর মাতার নাম এবং Edward Zuckerberg তার পিতার নাম।
মার্কের মা ছিলেন একজন Psychiatrist এবং বাবা ছিলেন একজন dentist. তাদের বাসার সামনেই ছিল তার বাবার clinic যেখানে তিনি রোগীদের চিকিৎসা দিতেন।
মার্ক জাকারবার্গ এর পরিবারে তিনি একা ছিলেন না তাদের পরিবারে আরো সদস্য ছিল। তার ছিল আরো তিন বোন। Arielle, Randi এবং Donna এই তিনজন হলেন মার্ক জাকারবার্গ এর বোন।
Computer এবং Programming নিয়ে অনেক অল্প বয়স থেকেই মার্ক জাকারবার্গ এর ছিল প্রচুর আগ্রহ । আগ্রহ দেখে তার বাবা তাকে Atari Basic Programming শেখানোর কথা চিন্তা করলেন। মাত্র 12 বছর বয়সে তিনি Atari Basic Programming ব্যবহার করে একটি চমৎকার Messaging Programme তৈরি করেছিলেন এবং তা সম্ভব হয়েছে একমাত্র কম্পিউটার এবং প্রোগ্রামিং নিয়ে তার প্রচুর আগ্রহ থাকার কারনে।
Mark Zuckerberg, Zucknet নামে নামকরণ করেছিলেন সেই ম্যাসেজিং প্রোগ্রামটিকে। এই প্রোগ্রামটি আস্তে আস্তে তার বাবাও ব্যবহার করতে শুরু করলেন। তার বাবার অফিসের সবগুলো কম্পিউটারকে একটি আরেকটির সাথে যুক্ত করার জন্য Zucknet প্রোগ্রামটি ব্যবহার শুরু হয়ে গেল।
ধীরে ধীরে তার পরিবারের সকল সদস্যই Zucknet messenger টিকে যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করলেন। এমনকি এই ম্যাসেজিং প্রোগ্রামটিকে তার বাবা তার Dental অফিসে receptionist এর সাথে যোগাযোগ করতে ব্যবহার করতে শুরু করলেন।
Zucknet আবিষ্কার করেই মার্ক থেমে থাকলেন না। ছোট বয়সেই বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার গেমস ও তৈরি করলেন তার বন্ধুদের সাথে মিলিত হয়ে। এছাড়াও যখন তিনি স্কুলে পড়তেন সেসময় একটা artificially intelligent media player আবিষ্কার করেছিলেন Synapse নামে। এই মিউজিক প্লেয়ারে মাধ্যমে নিজে নিজে ব্যাবহার কারীর পছন্দমত মিউজিক প্লে লিস্ট তৈরি করে।
Mark Zuckerberg এর Synapse মিডিয়া প্লেয়ারের ওপর প্রচুর আগ্রহ দেখাতে শুরু করে সে সময়ের বিখ্যাত বড় বড় আইটি সফটওয়্যার কোম্পানি গুলো।যেমন- মাইক্রোসফট এবং AOL। এ মিডিয়াপ্লেয়ার টি কিনার জন্য মার্ক জাকারবার্গ কে প্রস্তাব দেন সে সময়ের বিখ্যাত আইটি সফটওয়্যার কোম্পানি। কিন্তু মার্ক জাকারবার্গ এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
মার্ক জুকারবার্গ এর শিক্ষা জীবন
মার্ক জাকারবার্গ বাবা মার্ককে একজন টিউশন শিক্ষকের কাছে দিলেন তার কম্পিউটার ও প্রোগ্রামিং এর বিষয়ে থাকা অসাধারণ আগ্রহ দেখে। মার্ক জাকারবার্গ এর শিক্ষকের নাম ছিল ডেবিট নিউম্যান। প্রত্যেক সপ্তাহে মার্কের বাসায় আসতেন ডেবিট নিউম্যান, তাকে কম্পিউটার শেখাতে। মার্ক জাকারবার্গ তার স্কুলের অনেক প্রতিভাশালী ছাত্র ছিলেন এখানে কোনো সন্দেহ নেই।
Phillips Exeter Academy নামে স্কুলে মার্ক জাকারবার্গ ভর্তি করানো হয়। যেখানে মার্ক জাকারবার্গ প্রতিভার মাধ্যমে School team এর ক্যাপ্টেন হয়ে দেখায়। অন্যান্য সকল বিষয়ে মার্ক অনেক ভালো ছিলেন। যেমনঃ Science, literature এবং classics ইত্যাদি।
Mark Zuckerberg সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন কম্পিউটার প্রোগ্রাম গুলোর উন্নতি করতেই থাকে। এতো কিছুর পরো কম্পিউটারে থাকা তার আগ্রহ কখনো কমে যায়নি।
মিউজিক সফটওয়্যার টি Synapse নামে আবিষ্কার করেন হাই স্কুলে পড়তে থাকা অবস্থায়। Exeter থেকে 2002 সালে তিনি গ্রেজুয়েশন পাস করে বের হন। তারপর Harvard University তে ভর্তি হন তিনি উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য। Harvard University তে পড়তে থাকা অবস্থায় মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক নিয়ে কাজ শুরু করেন।
মার্ক জাকারবার্গ নিজের কাজে এতোটা মুগ্ধ হয়ে যান এবং এতটা আগ্রহী হয়ে পড়েন যে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন আর কলেজে যাবেন না। তারপর থেকে মার্ক আর কলেজে গেলেন না এবং তার সম্পূর্ণ ধ্যান দিয়ে দিলেন ফেসবুকের উপর।
হার্বাট ইউনিভার্সিটি তে পড়তে থাকা অবস্থায় মার্ক জাকারবার্গ CourseMash নামে একটি সফটওয়্যার প্রোগ্রাম তৈরি করে ফেলেন। এরপর থেকেই ইউনিভার্সিটির সবাই তাকে SOFTWARE DEVELOPER বলে ডাকে।
FACEBOOK CEO mark zuckerberg এর FACEMASH DEVELOPMENT
মার্ক জাকারবার্গ এর একটি বিশেষ ধরনের ওয়েবসাইট তৈরির করার চিন্তা মাথায় আসে যখন তিনি Harvard University তে অধ্যায়নরত অবস্থায় ছিলেন। মার্ক তার ওয়েবসাইটের নাম দিয়েছিলেন Facemash । ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছিলেন বিভিন্ন ধরনের ছবি দিয়ে। তিনি এজন্য Harvard University ডাটাবেজ হ্যাক করেন। এই ওয়েবসাইটের জন্য কলেজের প্রত্যেক স্টুডেন্টদের ফটো এবং প্রোফাইল পিকচার চুরি করেন তিনি।
Facemash ওয়েবসাইটে এমন একটি প্রোগ্রাম ছিল যেটা নিজে নিজেই দুটি মেয়ের ছবি সিলেক্ট করে ভিজিটরদের দেখাতো এবং তাদেরকে প্রশ্ন করা হতো কোন ছবিটি সবচেয়ে সুন্দর। এবং দেখানো দুটি ছবির মধ্যে পছন্দ করে ভোট করতে বলা হত। কেবলমাত্র Harvard এর ছাত্রদের ছবি দেখানো হত Facemash ওয়েবসাইটে।
Mark Zuckerberg যেহেতু হার্বাট ইউনিভার্সিটি ডাটাবেস চুরি করে ছবি সংগ্রহ করেছিল। এজন্য এই ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করতে পারতেন শুধুমাত্র হার্বার্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা। মার্কের এই ওয়েবসাইটটি কিছুদিনের মাঝখানে জনপ্রিয় হয়ে যায় পুরো কলেজ ক্যাম্পাসে। একসাথে অধিক মানুষ ব্যবহারের ফলে এই ওয়েবসাইটটি কারনে ইউনিভার্সিটির সার্ভার ক্রাশ হয়ে যায়।
এরপর ইউনিভার্সিটি সার্ভার চুরি করার জন্য তার বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে বলা হলো ইউনিভার্সিটির কমিটি পক্ষ থেকে। সেখানে কেউ তার ওয়েবসাইট সম্পর্কে কোন সুনাম করেনি। তারপর ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
Mark Zuckerberg এর Facebook আবিষ্কার
Divya Narendra নামের Harvard এর একজন ছাত্র Facebook Ceo এর কাছে এসেছিলেন Facemash এর কাহিনীর কিছু সময় আগে। Divya Narendra মার্ক কে একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট তৈরি করার বুদ্ধি দিয়েছিলেন।
তবে Divya এর শর্ত দিয়েছিল শুধুমাত্র এই ওয়েবসাইটটি হার্বাট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের জন্য তৈরি করা হবে। তিনি বলেছিল ওয়েবসাইটের ইউজারনেম হিসেবে ব্যবহার করবেন হার্বার্ডের ইমেইল আইডি।
Divya Narendra এটিও বলেছিলেন হারবার্ট কানেকশন হবে ওয়েবসাইটিরর নাম যেটাকে পরে আবার connectu তে পরিবর্তন করা হয়েছিল। দিব্যা বলেন যে, এই ওয়েবসাইটটির ব্যাবহার কারীরা ইচ্ছামত ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফটো, পার্সোনাল ইনফরমেশন, এবং ইউজফুল লিংক পোস্ট করতে পারবে।
এই সাইটে Facebook Ceo এর কাজ ছিল সাইটটিকে প্রোগ্রামিং করা। মার্ক কাজটি করার জন্য রাজি হয়ে যায় । দিব্যা এবং তার দুই সঙ্গীর সাথে কথা বলার পর Harvard connection ওয়েবসাইটে কাজ করার সময় মার্ক জাকারবার্গ এর মাথায় আরেকটি নতুন বুদ্ধি চলে আসে। নিজের একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের কথা তার মাথায় চলে আসে।
Facebook Ceo এর মাথায় আইডিয়াটি আসার সাথে সাথেই তাড়াতাড়ি 04 february 2004 সালে TheFacebook.com ডোমেইনটি রেজিস্টার করে ফেলেন। এখন পুরা দুনিয়া যেটাকে facebook.com নামে চেনেন।
হার্বাট ইউনিভার্সিটির ছাত্ররাই কেবল প্রথম প্রথম ফেসবুক ব্যবহার শুরু করেছে। 4000 ইউজার ফেসবুকের মধ্যে রেজিস্টার করে ফেলেন খুব অল্পসময়ের মাঝখানে।
Mark Zuckerberg ফেসবুকের জনপ্রিয়তা দেখে বুঝতে পারলেন এটাকে হারবারড এর বাইরে audience এর জন্য উপলব্ধ করানো যাবে। Facebook Ceo ও তার সঙ্গীরা চিন্তা করে দেখলো এবং সিদ্ধান্ত নিলো যে তারা এই প্রজেক্টটি আরো প্রোগ্রামার বাড়াবে। তারপর আস্তে আস্তে 2005 সালে ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টদের এবং USA প্রত্যেক educational institutions দের জন্য ফেসবুক উপলব্ধ করে দেওয়া হল।
তাই বলতে গেলে, ছাত্রদের লক্ষ্য করেই ফেসবুক সর্বপ্রথমে তৈরি করা হয়েছিল। ফেসবুকের জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহার এতটাই বাড়তে থাকে যে মার্ক সিদ্ধান্ত নিলেন শুধুমাত্র ছাত্র-ছাত্রী কেন বিশ্বের যেকোনো জায়গায় যেকোন প্রান্ত থেকে নিজের একটি ফেসবুক আইডি খুলতে পারবেন যে কোন ব্যক্তি।
Facebook Ceo নিজের পড়াশোনা ছেড়ে দিলেন যাতে ফেসবুকের উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে। তখন সবার জন্য একটি নতুন বিষয় ছিল নিজের একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে এমন একটি ওয়েবসাইট । যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা বিশ্বের যে কোন ব্যক্তির সাথে অনলাইনে কথা বলতে পারি।
তাছাড়াও নতুন নতুন বন্ধু বানাতে পারি। আর এই জন্যই অনেক অল্প সময়ের মধ্যে ফেসবুকের ব্যবহারকারী বাড়তে থাকে এবং আজ প্রায় 1 বিলিয়ন এর থেকে অধিক।
FACEBOOK CEO মার্ক জাকারবার্গ এর সফলতার গল্প
Facebook Ceo কেবল উনিশ বছর বয়সে একটি জনপ্রিয় সাইট তৈরি করেন তা হলো আজকের ফেইসবুক। তবে কম্পিউটার এবং প্রোগ্রামিংয়ের আগ্রহ তার ছোটবেলা থেকেই ছিল, নিজের কাজকে মার্ক জাকারবার্গ সব সময় গুরুত্ব দিতেন।
আমরা জানি Mark Zuckerberg কলেজে জীবনে তৈরি করা ওয়েব সাইটটি আজ তাকে কোথায় নিয়ে গেছে। মনে রাখবেন আপনাকে বাধা দেওয়ার জন্য মানুষ অনেক ধরনের কথা বলবে। তবে নিজের কাজে মন দিতে হবে সফল হওয়ার জন্য। নিজের উপর বিশ্বাস রেখে মানুষের কথাতে ধ্যান দেওয়া যাবে না। এবং এটাই আমরা Facebook Ceo মার্ক জাকারবার্গ এর সফল জীবনীতে পেয়েছি।
- Mark Zuckerberg বর্তমানে ফেসবুকের মতো একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এর ফাউন্ডার চেয়ারম্যান এবং সি ই ও।
- মার্ক জুকারবার্গ কে টাইম ম্যাগাজিনে পারসন অব দ্য ইয়ার হিসেবে সম্মান দেয়া হয় জানুয়ারি 2010 সালে।
- Mark Zuckerberg কে youngest billionaire হিসেবে বলা হয় forbes magazine এর ধারা 2010 সালে।
- United States এর সব থেকে ধনী ব্যক্তিদের 400 জনের একটি তালিকা মধ্যে Mark Zuckerberg নাম ছিল সপ্তম স্থানে, Forbes magazine দ্বারা প্রকাশ করা হয় 2015 সালে।
তাহলে Mark Zuckerberg এর সফলতা নিয়ে আপনার আইডিয়া অবশ্যই হয়ে গেছে। তাই না? তাহলে এটাই ছিল Facebook Ceo এর জীবনী এবং সফলতার কাহিনী। আশা করছি মার্ক জাকারবার্গ এর বাংলা বায়োগ্রাফি এবং সাকসেস স্টরি আপনাদের সবার কাছে ভালো লেগেছে।