সুবহানাল্লাহ অর্থ কি? সুবহানাল্লাহ এর ফজিলতঃ সারাদিনে আমরা কতো কতো বাক্য বলে থাকি। সব বাক্যের ফজিলত কি সমান? সুবহানাল্লাহ এর ফজলত সব থেকে বেশি। কিন্তু আফসোস! আমরা অনেকেই জানিনা সুবহানাল্লাহ অর্থ কি ? সুবহানাল্লাহ এর ফজিলত কি? সুবহানাল্লাহ কখন বলতে হয় ? তবে চিন্তা নেই! এখানে আপনারা সব কিছু জানতে পারবেন। কারন এই পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি সুবহানাল্লাহ সম্পর্কে বিস্তারিত।
“সুবহানাল্লাহ” এর পরিচয়ঃ
সুবহানাল্লাহ سُبْحَانَ اللهِ হচ্ছে একটি আরবি বাক্য। বাক্যটিতে রয়েছে দুইটি অংশ। প্রথম অংশটি হচ্ছে সুবহান এবং দিতীয় অংশটি হচ্ছে আল্লাহ।
সুবহানাল্লাহ অর্থ কি / Subhanallah Meaning in Bengali
সুবহান শব্দের অর্থ হলো “মহান, পবিত্র“। আর আল্লাহ মানে আল্লাহ। এককথায় বলতে গেলে সুবহানাল্লাহ এর অর্থ হলো “আল্লাহ মহান, আল্লাহ পবিত্র“।
সুবহানাল্লাহ কখন বলতে হয় –
আমরা সবাই জানি “সুবহানাল্লাহ” একটি মূল্যবান বাক্য। কিন্তু এই বাক্যটি ঠিক কখন বলতে হয়, তা আমরা অনেকেই জানিনা। এতে প্রায়ই আমরা উলটা পালটা বলে ফেলি। যেমন “মাশাআল্লাহ” বলার পরিবর্তে “সুবহানাল্লাহ” বলে ফেলি। অথবা “আল্লাহুয়াকবার” বলার পরিবর্তে “সুবহানাল্লাহ” বলে ফেলি। তাই আমাদেরকে জানতে হবে ঠিক কখন সুবহানাল্লাহ বলতে হয়।
সুবহানআল্লাহ বলার সঠিক সময়ঃ
- আপনি যখন উপর থেকে নিচের দিকে নামবেন তখন সুবহানাল্লাহ বলুন।
- মহান আল্লাহর মহিমা ও করুণার কথা শুনলে সুবহানাল্লাহ বলুন।
- মহান আল্লাহর সৃষ্ট সুন্দর ফুল ও ফল দেখে সুবহানাল্লাহ বলুন।
- যেকোনো বৈধ এবং সুন্দর জিনিস দেখে সুবহানাল্লাহ বলুন।
- যেকোনো ভাল কথা শুনলে করলে সুবহানাল্লাহ বলুন।
- যেকোনো আশ্চার্যজনক কথা শুনলে সুবহানাল্লাহ বলুন।
এসব ক্ষেত্রে বলুন সুবহানাল্লাহ। সুবহানাল্লাহ অর্থ – “আল্লাহ মহান, পূতপবিত্র“।
সুবহানাল্লাহ সঠিক বানান
সুবহানাল্লাহ সঠিক বানান হলোঃ
سُبْحَانَ اللهِ
সুবহানাল্লাহ অর্থ আল্লাহ পূতঃপবিত্র।
সুবহানাল্লাহ এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য
ছোট্ট একটি বাক্য সুবহানাল্লাহ। কিন্তু এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য যে কতো বেশি তা নিচের হাদীস গুলো পড়লেই বুঝা যায়।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এ বাক্যটির অর্থ হলো- আল্লাহ পবিত্র অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সকল মন্দ ও সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।
মাইমুন ইবনে মেহরান র. “সুবহানাল্লাহ”র প্রসঙ্গে বলেছেন, এতে আল্লাহ তাআলার সম্মান প্রদর্শন রয়েছে এবং তাঁর পবিত্রতার বর্ণনা রয়েছে।
একবার ওমর রা. আলি রা. এর কাছে প্রশ্ন করেছিলেন, “সুবহানাল্লাহ’র তাৎপর্য কি?” তখন আলি রা. উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আল্লাহ তাআলা এ বাক্যটি নিজের জন্য পছন্দ করেছেন। তিনি এ বাক্য দ্বারা সন্তুষ্ট হন। এ বাক্যটির জিকির আল্লাহ তাআলার মহান দরবারে অত্যন্ত পছন্দনীয়। সুবহানাল্লাহ।
সুবহানাল্লাহ এর ফজিলত । সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত
সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত বলে শেষ করা যাবে না। সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. বলেন, “আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট ছিলাম।”
তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের কোনো ব্যক্তি প্রত্যেক দিন ১০০০ নেকি অর্জন করতে সক্ষম কি?
সেখান থেকে একজন বললেন, “আমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি কিভাবে ১০০০ নেকি অর্জন করবে?”
তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ১০০ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ) বললে, তার জন্য ১০০০ হাজার নেকি লেখা হবে। অথবা তার ১০০০ পাপ মোচন করা হবে। (মুসলিম, মিশকাত)
সুবহানাল্লাহ এর আরবি হচ্ছে সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম।
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম
“সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম” এর অর্থ “মহান সেই আল্লাহ এবং তারই সকল প্রশংসা। মহান সেই আল্লাহ যিনি সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী”।
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযীম এর ফজিলত
জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন
‘যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুরগাছ রোপণ করা হয়।’ তিরমিজি : ৩৪৬৪.
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেনঃ
দুটি বাক্য এমন রয়েছে, যা বলা সহজ। আমলের পাল্লায় অনেক ভারী। আর আল্লাহর কাছেও অধিক পছন্দনীয়। সেটি হলো, “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম”। (সহিহ বুখারিঃ ৬৪০৬)
১০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহির ফজিলত
কোনো ব্যক্তি যদি প্রতিদিন ১০০ বার সুবহানাল্লাহ পড়ে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রুপন করেন। যেমন হাদিসে এসেছে –
সকালে ১০০ বার ও বিকালে ১০০ বার “সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি” পড়লে সৃষ্টিকুলের সমস্ত মানুষ থেকে বেশী মর্যাদা দেওয়া হবে। (সহিহ আবু দাউদ, হাদিস নং- ৫০৯)
আলহামদুলিল্লাহ্ এতোক্ষনে আপনি জানে গেছেন Subhanallah Meaning in Bengali / সুবহানাল্লাহ অর্থ কি। সুবহানাল্লাহ অর্থ আল্লাহ মহান, পূতপবিত্র। তাছাড়াও সুবহানাল্লাহ এর ফজিলত কতো বেশি তাতো আপনি বুঝতেই পারছেন। এখন সময় আমল করার। চলুন আমরা বেশি বেশি সুবহানাল্লাহ এর আমল করি। সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।